বালদাউইন সামরিক কম্পাউন্ডে আশ-শাবাবের অবিশ্বাস্য ২০ ঘন্টার দীর্ঘ অপারেশন

আল-কায়েদা পূর্ব আফ্রিকা ভিত্তিক সশস্ত্র ইসলামি প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন। দলটির মুজাহিদিনরা গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ), সোমালিয়ার হিরান রাজ্যে শত্রু বাহিনীর ভীত কাঁপিয়ে দেওয়া ২০ ঘন্টারও বেশি দীর্ঘ একটি বীরত্বপূর্ণ অপারেশন পরিচালনা করেছেন।

শাহাদাহ এজেন্সির তথ্যমতে, গত ১১ মার্চ মঙ্গলবার ভোর ৪টায়, সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় হিরান রাজ্যের প্রাদেশিক রাজধানী বালদাউইনে অবিশ্বাস্য একটি সামরিক অপারেশন পরিচালনা করেছিলেন হারাকাতুশ শাবাব প্রশাসনের ইস্তেশহাদী ব্রিগেডের মুজাহিদিনরা। অপারেশনটি প্রদেশিক রাজধানীর একটি সামরিক কম্পাউন্ড লক্ষ্য করে শক্তিশালী গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে শুরু করা হয়েছিল। এতে হোটেলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং অনেক শত্রু সৈন্য হতাহত হয়। শক্তিশালী এই বোমা বিস্ফোরণে শত্রু বাহিনীতে আতংক ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে, আর এই সময়টিকে কাজে লাগিয়ে হারাকাতুশ শাবাবের ইস্তেশহাদী ব্রিগেডের ইনগিমাসী যোদ্ধারা কম্পাউন্ডে ঢুকে পড়েন এবং এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তীব্র আক্রমণ চালাতে থাকেন।

সূত্রমতে, শাবাবের হামলার লক্ষ্যবস্তু সামরিক কম্পাউন্ডে এদিন পশ্চিমা সমর্থিত মোগাদিশু সরকারের হাই-প্রোফাইলের সামরিক কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর শীর্ষ নেতারা একত্রিত হয়েছিল। শত্রু বাহিনীর উচ্চ-প্রোফাইলের কর্মকর্তাদের এই বৈঠকের লক্ষ্য ছিলো, হারাকাতুশ শাবাবের বিজয় অভিযান রুখতে দূর্ভেদ্য প্রতিরোধ গড়ে তুলা এবং সামরিক বাহিনীগুলোকে পুনর্গঠন করা। কিন্তু হারাকাতুশ শাবাব প্রশাসন তাদের গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে এই বৈঠকের তথ্য আগেই জেনে যান। আর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মুজাহিদিনরা কম্পাউন্ডে অপারেশন পরিচালনার পরিকল্পনা তৈরি করেন।

শাবাবের হামলার লক্ষবস্তু সামরিক কম্পাউন্ড

মুজাহিদিনরা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ইস্তেশহাদী হামলা ও ইনগিমাসী যোদ্ধাদের মাধ্যমে কম্পাউন্ডের নিয়ন্ত্রণ নেন। এরপর কম্পাউন্ডের ভিতর বৈঠকের জন্য একত্রিত হওয়া শত্রু বাহিনীর হাই-প্রোফাইলের সামরিক ও মিলিশিয়া কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে টার্গেট কিলিং অপারেশন শুরু করেন মুজাহিদিনরা। এই অপারেশন শুরুর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মুজাহিদিনরা শত্রু বাহিনীর হাই-প্রোফাইলের অন্তত ২০ কর্মকর্তাকে হত্যা করতে সক্ষম হন, যাদের মধ্যে ৪ জনই ছিলো বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা।

এদিকে অপারেশন চলা কালে কম্পাউন্ডকে বাহির থেকে ঘিরে ফেলতে মোগাদিশু সরকারি বাহিনীর শত শত সেনা ও পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে জড়ো হয়। আর তখনই হারাকাতুশ শাবাবের অন্য একজন ইস্তেশহাদী মুজাহিদ বাহির থেকে জড়ো হওয়া শত্রু বাহিনীর মাঝে দ্বিতীয় গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ ঘটান। এতে আরও কয়েক ডজন শত্রু সৈন্য হতাহত হয়। একই সাথে কম্পাউন্ডের ভিতরে আটকে পড়া শত্রু কর্মকর্তাদেরও লাশের সারি বাড়িতে থাকে।

আর এভাবেই মঙ্গলবার সকালে শুরু হওয়া এই অপারেশন কোনো ইনগিমাসী মুজাহিদ হতাহত হওয়া ছাড়াই সন্ধ্যার পরও চলতে থাকে। চারদিকে রাত যখন গভীর হতে থাকে, তখন কম্পাউন্ডের ভিতরে এই অভিযানে অংশ নেওয়া মুজাহিদিনরা নিজেদেরকে আড়াল করে ফেলেন। এতে মোগাদিশু বাহিনী ভাবতে শুরু করে ইনগিমাসী মুজাহিদিনরা সকলে শহিদ হয়েছেন। আর এটা ভেবেই তারা হতাহত সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্ধার করতে ভিতরে প্রবেশের চেষ্টা করে, কিন্তু তখনই ইনগিমাসী মুজাহিদিনরা তাদের চমক দেখান এবং আরও কয়েক ডজন শত্রু সৈন্যকে হতাহত করেন।

এমন পরিস্থিতিতে মোগাদিশু বাহিনী দখলদার ইথিওপিয়ান ও জিবুতি সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে নতুন করে অভিযান শুরু করে। এসময় শত্রু বাহিনী পুরো কম্পাউন্ড ইনগিমাসী মুজাহিদদের উপর ধ্বসিয়া দেওয়ার লক্ষ্যে ভারী গোলাবর্ষণও করতে শুরু করে। পরিস্থিতি বিবেচনায় মুজাহিদিনরা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কম্পাউন্ডের গোপন স্থানে সরে যান। পরে মোগাদিশু বাহিনী অভিযান সমাপ্তের ঘোষণা করে এবং হতাহতদের উদ্ধার কাজ শুরু করে।

এসময় কম্পাউন্ড এলাকায় পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়ে আসে, আর মোগাদিশু বাহিনীও হামলা আর না হওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে। আর শত্রুর এই আত্মবিশ্বাসী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে রাত ১১টার পরে, ভারী অস্ত্রে সজ্জিত আশ-শাবাবের অন্য একটি ইউনিট শহরের পশ্চিম দিক থেকে কম্পাউন্ডের দিকে এগিয়ে আসে এবং শত্রু বাহিনীকে লক্ষ্য করে তীব্র আক্রমণ চালাতে শুরু করেন। ফলে কম্পাউন্ডা ঘিরে থাকা শত্রু বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। এভাবে শত্রু বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে কম্পাউন্ডের ভিতরে প্রবেশ করেন হারাকাতুশ শাবাবের স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা। তাঁরা কম্পাউন্ডের ভিতরে ঢুকে ইনগিমাসী মুজাহিদদেরকে সাথে নিয়ে কোনো মুজাহিদ হতাহত ছাড়াই নিরাপদে বের হয়ে আসেন।

তথ্যসূত্র:আল ফিরদাউস

Share With freinds & Others

Leave a Comment