নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার আরসা প্রধান আতাউল্লাহ, বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য লজ্জা

আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) প্রধান আবু আম্মার আতাউল্লাহ জুনুনিকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানা যায় এবং তাকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। গ্রেপ্তারের এতো দ্রুত সময়ে বিচার কার্য শুরু হওয়া বাংলাদেশের ইতিহাস বিবেচনায় খুবই আশ্চর্যজনক ব্যপার। তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরুধী মামলা দায়ের করা হয়।অথচ পূর্বে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরসা কোন তৎপরতা চালিয়েছে এমন কোন শক্তিশালী প্রমান নেই। তাদের তৎপরতা যতটুকু উঠে আসে তা কেবল রাখাইন এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনি কোন সময় বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে হুমকি দিয়েছে এমন নজীরও দেখা যায়না। বরং বিভিন্ন সময় এই ব্যাক্তি তার ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য। তাহলে কেন গ্রেপ্তার করা হলো এই মুক্তিকামীকে আর কে এই আতাউল্লাহ জুনুনি এবং তাকে কি আদৌ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নাকি অন্যকিছু সেই সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ভাবে জানার চেষ্টা করবো……..

বর্তমানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হয়ে বৌদ্ধ সন্ত্রাসী আরাকান আর্মি এবং জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া দলটি হলো আরসা। ২০১৩ সাল থেকে এই দলটির দায়িত্বপালন করে আসছেন আবু আম্মার আতাউল্লাহ জুনুনি। বারবার তাদের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের সাথে লিয়াজু করার অপপ্রচার করা হলেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশার আলো হচ্ছে আরসা ও আতাউল্লাহ। ১৯৭৭ সালে পাকিস্তানের করাচীতে জন্মগ্রহণ করেন আবু আম্মার আতাউল্লাহ জুনুনি। বাবা রোহিঙ্গা বংশোদ্ভূত গোলাম শরীফ। সাত ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আতাউল্লাহ জুনুনি অষ্টম সন্তান।ছয় বছর বয়সে পাড়ি জমান সৌদি আরব এর রিয়াদে। সেখানে ইসলামের উপর উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং রিয়াদ ও পবিত্র মক্কা নগরীতে শিক্ষকতা করেন। তিনি চাইলেই সেখানে আরাম আয়েশের সাথে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু মিয়ানমারে মুসলমানদের উপর নির্যাতন বন্ধে ও একটি আলাদা রোহিঙ্গা মুসলিম রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে চলে আসেন আরাকানে। বেছে নিলেন কাটা ঘেরা পথ। যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে বিপদ লুকিয়ে আছে।যেকোনো সময় মৃত্যু সামনে এসে দাড়াতে পারে। তারপর থেকেই শুরু হয় তার সংগ্রামী জীবন। দীর্ঘদিন রোহিঙ্গাদের মধ্যে মাথা তুলে বাচার জন্য স্বপ্ন বুনতে নিরলস পরিশ্রম করেছেন। যুবকদের নিয়ে গঠন করেন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেসন আর্মি(আরসা)। যারা আজ রোহিঙ্গাদের আশার আলো, স্বপ্নের প্রতীক। আতাউল্লাহ জুনুনি তার এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মিয়ানমার এর কিছু অংশ নিয়ে খ্রিস্টান রাস্ট্র গঠন করার চক্রান্তকারীদেরকে হুশিয়ারি দেন। তার এই বক্তব্যই হয়তো কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে নিজের জন্য। আন্তর্জাতিক ক্রুসেডীয় শক্তি হয়তো আরসা ও আতাউল্লাহকে তাদের জন্য হুমকি স্বরুপ দেখা শুরু করেছে। তাছাড়াও চীনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ করে যাওয়া এই বীরকে হয়তো চীনারাও তাদের স্বার্থের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে। বিশ্ব কুফরি শক্তি চাচ্ছেনা তাদের সামনে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় শক্তিশালী কোন মুসলিম সংগঠন থাকুক যারা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহকে সামনে রেখে মুসলমানদের অধিকার আদায় করে। তাই বাংলাদেশের চাটুকার শাসকদেরকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেছে আর এই ভূমির শাসকরাও তাদের বিদেশি প্রভূদেরকে খুশি করতে গ্রেপ্তার করে এই মহান বীর যোদ্ধাকে। কেননা সাম্প্রতিক আমেরিকার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কট্টর হিন্দুত্ববাদী তুলসী গ্যাবার্ড এর বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এবং জাতিসংঘের মহাসচিব এর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের পরই আতাউল্লাহ জুনুনিকে গ্রেপ্তার দেখানোকে বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ বলেই বুঝা যায়। কিন্তু তাকে কি আদৌ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে নাকি পূর্বেই রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গ্রেপ্তার করে উপযুক্ত সময়ে নারায়ণগঞ্জে গ্রেফতার দেখিয়ে বিদেশি প্রভূদেরকে মন জয় করার চেষ্টা করা হয়েছে তা একটি রহস্য। আমরা বিগত ফ্যাসিবাদের দিনগুলোতে এমনটাই দেখেছি যে বাড়ি থেকে কাউকে গুম করে পরবর্তীতে দূরবর্তী কোন স্থানে গ্রেফতার দেখানো হতো। আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মী তাদের অফিসিয়াল অনলাইন প্লাটফর্মে নিজেদের নেতার গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে পবিত্র আল কুরআনের সূরা বাকারার কিছু আয়াত দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানিয়েছেন। আয়াতগুলোর অর্থ ও সারমর্ম হুবুহু তুলে ধরা হলো-

2:155

وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿۱۵۵﴾ۙ
আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।

2:156

الَّذِیۡنَ اِذَاۤ اَصَابَتۡہُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا لِلّٰہِ وَ اِنَّاۤ اِلَیۡہِ رٰجِعُوۡنَ ﴿۱۵۶﴾ؕ
যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।

2:157

اُولٰٓئِکَ عَلَیۡہِمۡ صَلَوٰتٌ مِّنۡ رَّبِّہِمۡ وَ رَحۡمَۃٌ ۟ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُہۡتَدُوۡنَ ﴿۱۵۷﴾
তাদের উপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।

পরিশেষে আমরা মুসলমান তাই ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, আরাকান ও উইঘুরের মুসলমানরাও আমাদের ভাই। তাদের ভূমি পুনরুদ্ধার, তাদের অধিকার আদায় এবং ইজ্জত ও জান,মালের হেফাজত করার দায়িত্ব আমাদের। অতএব আমরা যদি তাদেরকে সাহায্য করতে না পারি তাহলে শত্রুতা যেন পোষণ না করি। কেননা মুসলিম ও কাফিরদের চলমান লড়াইয়ে কাফিরের পক্ষাবলম্বন করাটা কুফরি যা ঈমান ভঙ্গের অন্যতম কারণ।

Share With freinds & Others

Leave a Comment